24 C
Dhaka
Saturday, December 6, 2025

হঠাৎ করে অনেক ইসরায়েলি সেনা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন

আলোচিত সংবাদ

 

গাজায় যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে আসা ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে মানসিক যন্ত্রণার মাত্রা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ১৮ মাস অতিবাহিত হলেও অনেকেই এখনও যুদ্ধের ভয় ও আতঙ্ক থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। কিছু সেনা এমন পরিস্থিতিতে পৌঁছেছেন যে, তারা আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন।

২৭ বছর বয়সী এক সার্জেন্ট মেজর জানান, গাজার যুদ্ধে আহত হওয়ার পর তিনি দীর্ঘদিনের মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। “দুই হাতে সাপ জড়িয়ে ধরে থাকা এক মুহূর্তের জন্য শান্তি এনে দিয়েছে, তবে চোখ বন্ধ করলে যুদ্ধের শব্দ ফিরে আসে,” তিনি বলেন। এ ধরনের থেরাপি ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের এক খামারে নেওয়া হচ্ছে, যেখানে যুদ্ধফেরত সেনারা প্রাণী সংস্পর্শে এসে শান্তি খুঁজছেন।

আরও পড়ুনঃ  ফেসবুকে লাইভ দিয়ে ফেঁসে গেলেন যুবক

সেনাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি ইসরায়েলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে প্রায় ১১ হাজার সেনা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এই সংখ্যা দেশের ইতিহাসে এক যুদ্ধের পর সেনাদের মধ্যে এমন বড় ধরণের মানসিক আঘাতের রেকর্ড।

ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে আত্মহত্যার হারও বেড়েছে। যুদ্ধ শুরুর আগে প্রতি বছর গড়ে ১৩ জন সেনা আত্মহত্যা করতেন, তবে যুদ্ধের পর ২০২৩ সালে এটি বেড়ে ২১ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত আরও ২৭৯ জন সেনা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন, তবে তারা বেঁচে গেছেন।

আরও পড়ুনঃ  কুষ্টিয়ায় সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের দুই মামলা

সেনাদের পুনর্বাসন ও মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। শত শত মানসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিয়োগ, মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মোতায়েন এবং সহায়তা হটলাইন চালু করা হয়েছে। এছাড়া অবসরের পর যৌথ থেরাপি সেশন ও প্রাণী-ভিত্তিক থেরাপি প্রদান করা হচ্ছে।

সদোট ইয়াম কিবুতজে অবস্থিত ‘ব্যাক টু লাইফ’ খামারটি এই ধরনের উদ্যোগের উদাহরণ। এখানে যুদ্ধফেরত সেনারা কুকুর, পাখি, মুরগিসহ বিভিন্ন প্রাণীর সঙ্গে কাজ করে থেরাপি নিচ্ছেন। খামারের পরামর্শদাতা মনোবিজ্ঞানী গাই ফ্লুম্যান বলেন, “প্রাণীর সঙ্গে থাকা সেনাদের মনকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে এবং অতীতের ট্রমার সঙ্গে শান্তিতে থাকা শিখতে হয়।”

আরও পড়ুনঃ  বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের মিথিলা | কালবেলা

একই সঙ্গে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, যদি পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও সমর্থন না দেওয়া হয়, তবে এই মানসিক যন্ত্রণার প্রভাব শুধু সেনাদের নয়, পুরো সমাজের ওপরও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে।

সেনাদের পুনর্বাসন বিভাগের প্রধান লিমোর লুরিয়া বলেন, “বর্তমান প্রজন্মের সেনারা আগের প্রজন্মের তুলনায় মানসিক আঘাতের প্রতিক্রিয়ায় ভিন্ন। তারা সাহায্য নিতে চাইছে এবং আমাদের দায়িত্ব তাদের সঠিক সহায়তা দেওয়া।”

এই খামার ও থেরাপির মাধ্যমে অনেক সেনা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন। তবে যুদ্ধের দীর্ঘায়িত প্রকৃতি, বারবার মোতায়েন এবং ভেতরের আতঙ্ক এখনও তাদের শান্তিতে বাধা হয়ে আছে।

Facebook Comments Box

আরও পড়ুন