19 C
Dhaka
Wednesday, December 3, 2025

সাড়ে ৪ হাজার টাকায় ডাকঘরে চাকরি করেন ইমরুল কায়েস!

আলোচিত সংবাদ

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক তারকা ইমরুল কায়েস এখন মেহেরপুরের উজলপুর ডাকঘরের কাগজে-কলমে কর্মচারী। তার মাসিক সম্মানী মাত্র চার হাজার চারশ নব্বই টাকা। কিন্তু যে ডাকঘরে তিনি কর্মরত বলে সরকারি রেকর্ডে দেখা যায়, সেই অফিসের অস্তিত্বই মেলে না বাস্তবে।

বিষয়টি জানাজানি হতেই মেহেরপুরজুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। অনেকে অবাক হয়ে বলছেন, জাতীয় দলের ক্রিকেটার কী সত্যিই সাড়ে চার হাজার টাকার সরকারি চাকরিজীবী? নাকি এটি প্রভাব খাটিয়ে নেওয়া এক নামমাত্র নিয়োগ?

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উজলপুর গ্রামে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক চিঠি ও নথিপত্র ফেরত যাচ্ছে প্রেরকের কাছে। এমনকি ফয়সাল নামের এক ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার ভিসা সংক্রান্ত কাগজ পাননি, সে চিঠি আবার যুক্তরাষ্ট্রেই ফেরত গেছে। আবার কেউ চাকরির সাক্ষাৎকারের ডাক হারিয়েছেন।

এমন অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে উজলপুর গ্রামে গেলে দেখা যায়, গ্রামটিতে ডাকঘরের কোনো অস্তিত্বই নেই। কোথাও কোনো সাইনবোর্ড কিংবা পোস্ট অফিসের চিহ্ন নেই।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা বলেন, এ এলাকায় তো কোনো পোস্ট অফিস নেই।

আরও পড়ুনঃ  একাধিক চিরকুট লিখে রাবি ছাত্রীর আত্মহত্যা, ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বলেন, ইমরুল কায়েসের বাবা ও দাদা নাকি আগে পোস্ট অফিস সংক্রান্ত কাজ করতেন। সে সময় তাদের বাড়িতেই ডাকঘর ছিল। এখন কে বা কারা কাজ করছে সে সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই।

মেহেরপুর প্রধান ডাকঘরের রেকর্ডে দেখা যায়, উজলপুর ডাকঘরে ইমরুল কায়েস ও আব্দুল জলিল ইডিএ (এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল এজেন্ট) পদে এবং রাজু আহমেদ ইডিএমসি পদে কর্মরত। কিন্তু গ্রামের মানুষ জানে না, তারা কারা বা কোথায় আছেন। জলিল নামে একজন চিঠি বিলি করতেন, পরে তিনি বিদেশে চলে গেছেন বলে জানা যায়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইমরুল কায়েস বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার একটি ক্রিকেট একাডেমিতে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন।

মেহেরপুর প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘চার-পাঁচ বছর হলো ইমরুল কায়েস ডাক বিভাগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। বিস্তারিত জানতে হলে বিভাগীয় ডাক পরিদর্শকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তবে ইমরুল আমাদের এলাকার ছেলে, তারকা ক্রিকেটার, মেহেরপুরের গর্ব। তাকে নিয়ে নেতিবাচক কিছু না লিখলেই ভালো।’

আরও পড়ুনঃ  ৬০ বিজিবির অভিযানে সীমান্তে ৪ কোটি টাকার পণ্য জব্দ

এ বিষয়ে বিভাগীয় ডাক পরিদর্শক অলক কুমার বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, ‘২০২১ সালে তৎকালীন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ডিও অনুযায়ী ইমরুল কায়েসকে উজলপুর ডাকঘরের ইডিএ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। মাসিক সম্মানী ৪৫০০ টাকা। এটি লাভজনক কোনো পদ নয়।’

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, যে ডাকঘর বাস্তবে নেই, সেখানে কীভাবে সরকারি নিয়োগ কার্যকর থাকে?

বিষয়টি নিয়ে ইমরুল কায়েস অস্ট্রেলিয়া থেকে মোবাইল ফোনে কালবেলা প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন। এতে তিনি ডাক বিভাগে তার সম্পৃক্ততা এবং সাম্প্রতিক সময়ে চিঠি ফেরত যাওয়ার ঘটনাটি অকপটে স্বীকার করে নেন।

ইমরুল কায়েস কালবেলাকে বলেন, ‘গ্রাম পোস্টমাস্টারদের কাজ চিঠি বিলি করা না। আমি পোস্ট অফিসের অনুরোধে তাদের সঙ্গে আমার নামটি যুক্ত করেছি, যাতে বাংলাদেশের ডাক বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি চিঠি ফেরত যাওয়ার বিষয়টি পোস্টম্যানের ভুল, আমার নয়।’

আরও পড়ুনঃ  গাঁজা সেবনকালে রাবির ৭ শিক্ষার্থী আটক

তিনি বলেন, ‘ইডিএ জলিল সাহেব এখন ওমরাহ করতে সৌদি আরব অবস্থান করছেন। দেশে ফিরলেই সমস্যা সমাধান করবেন।’

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবদুল সালাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে দেখব, সত্যতা মিললে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অবশ্যই গ্রহণ করা হবে।’

স্থানীয়রা বলছেন, ইমরুল কায়েস দেশের একজন সফল ক্রিকেটার, তার পরিবারও প্রভাবশালী। ইমরুলের শ্বশুর জহুরুল ইসলাম মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। এছাড়াও তিনি দেশের শীর্ষ একজন ঠিকাদার ও পরিবহন ব্যবসায়ী। তাদের অনেকেরই প্রশ্ন, গ্রামের কোনো দরিদ্র ছেলেকে এ পদে সুযোগ না দিয়ে এমন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়াটা কতটা ন্যায্য?

উল্লেখ্য, ইমরুল কায়েসের দাদা কায়েম বিশ্বাস পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া থেকে পঞ্চাশের দশকে মেহেরপুরে এসে বসতি গড়েছিলেন। তার দাদা ও বাবা দুজনেই গ্রাম পোস্টমাস্টার হিসেবে কাজ করেছেন। ইমরুলের বাবা বনি আমিন বিশ্বাস ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।

Facebook Comments Box

আরও পড়ুন