স্বাস্থ্যসচেতন জীবনযাপন নিয়ে আমরা যতই যত্ন নিই—চিনি কমাই, ফাস্টফুড এড়িয়ে চলি, নিয়মিত ডিটক্স পানীয় পান করি—তবু অজান্তেই ঘরের ভেতর লুকিয়ে থাকা কিছু জিনিস আমাদের শরীরে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিকের পাত্র, ননস্টিক কুকওয়্যার, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল, এমনকি সুগন্ধি মোমবাতি—এসব দৈনন্দিন জিনিস থেকেই দীর্ঘমেয়াদে শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি হতে পারে, যা ক্যানসারের অন্যতম কারণ।
বিপজ্জনক ৯টি ঘরোয়া পণ্য
১. প্লাস্টিক কনটেইনার
খাবার সংরক্ষণে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের পাত্রে থাকা বিপিএ (BPA) ও ফ্যালেটস রাসায়নিক হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা স্তন ও প্রজনন অঙ্গের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। গরম খাবার এতে রাখলে বিপদ আরও বেড়ে যায়।
২. ননস্টিক কুকওয়্যার
ননস্টিক পাত্রের টেফলন আবরণ উচ্চ তাপে বিষাক্ত পিএফওএ (PFOA) গ্যাস নির্গত করে। এটি লিভার, ফুসফুস ও থাইরয়েডের জন্য ক্ষতিকর এবং ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে।
৩. অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল
গরম বা লবণাক্ত খাবার ফয়েলে মুড়ে রাখলে অ্যালুমিনিয়াম শরীরে প্রবেশ করে স্নায়ু ও কোষের ক্ষতি ঘটাতে পারে, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. পরিশোধিত তেল
ক্যানোলা, ভুট্টা ও সূর্যমুখী তেলের মতো রিফাইন্ড তেল উচ্চ তাপে ট্রান্সফ্যাট তৈরি করে, যা কোষের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করে ক্যানসারের পথ খুলে দেয়।
৫. প্লাস্টিকের পানির বোতল
রোদে বা গরম স্থানে রাখা বোতল থেকে বিপিএ ও মাইক্রোপ্লাস্টিক পানিতে মিশে যায়। নিয়মিত এই পানি পান করলে হরমোনজনিত সমস্যা ও টিউমারের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
৬. ক্যানজাত খাবার
ক্যানের অভ্যন্তরীণ প্রলেপে থাকা বিপিএ খাবারে মিশে যায়। নিয়মিত এসব খাবার খেলে লিভার ও প্রজনন কোষের ক্ষতি হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ‘BPA Free’ লেখা ক্যানজাত খাবার বেছে নিন।
৭. সুগন্ধি মোমবাতি
প্যারাফিন দিয়ে তৈরি মোমবাতি জ্বালালে বেনজিন ও টলুইন গ্যাস তৈরি হয়—যা পরিচিত কার্সিনোজেন বা ক্যানসারজনিত রাসায়নিক।
৮. প্লাস্টিকের কাটিং বোর্ড
দীর্ঘদিন ব্যবহারে এর সূক্ষ্ম দাগ থেকে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণিকা খাবারে মিশে শরীরে প্রবেশ করে, যা কোষের গঠন নষ্ট করতে পারে।
৯. আলট্রা প্রক্রিয়াজাত খাবার
চিপস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, প্রক্রিয়াজাত মাংস ও স্ন্যাকসে থাকা প্রিজারভেটিভ, কৃত্রিম রং ও ট্রান্সফ্যাট শরীরে প্রদাহ তৈরি করে, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
সচেতনতার আহ্বান
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিনে এসব অভ্যাস বদলানো কঠিন হলেও সচেতনতা এখনই জরুরি। প্লাস্টিকের বদলে কাচ বা স্টিলের পাত্র, ননস্টিকের বদলে কাস্ট আয়রন বা সিরামিক পাত্র ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক তেল ও তাজা খাবার খাওয়ার অভ্যাসই হতে পারে ক্যানসার প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
