দেশে যক্ষ্মা রোগী বেড়েছে- শীর্ষক সংবাদটি উদ্বেগজনক। এক সময় সমাজে যক্ষ্মা নিয়ে নানা কুসংস্কার প্রচলিত ছিল। এই যেমন- যক্ষ্মা হলে রক্ষা নেই। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে যক্ষ্মা রোগীরও আরোগ্যের পথ উন্মোচিত হয়েছে। যক্ষ্মা প্রতিরোধে আগে স্কুলগুলোতে বিনামূল্যে বিসিজি টিকা দেওয়া হতো প্রতি বছর। বর্তমানে এই কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দেশের শিশুরা এমনিতেই অপুষ্টিতে ভুগে থাকে। তদুপরি অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন, বায়ুদূষণ ও ধোঁয়া ইত্যাদির কারণে বেড়েছে যক্ষ্মা রোগী। এর পাশাপাশি জ্ঞাত ও অজ্ঞাতসারে সংক্রমণের ঝুঁকি তো রয়েছেই। সর্বোপরি বিনামূল্যে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়, নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময়ে সরকারি কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে ভাটা। এ ক্ষেত্রে কাজ করছে অর্থ প্রাপ্তি ও বরাদ্দের সমস্যাও।
সরকারের সর্বশেষ হিসাব বলছে, প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ ৭৯ হাজার মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন যক্ষ্মা রোগে। মারা যান ৪৪ হাজার। সেই হিসাবে প্রতিদিন ১ হাজার ৩৮ জন হচ্ছেন নতুন রোগী এবং মারা যাচ্ছেন ১২১ জন। যেটি উদ্বেগজনক তা হলো প্রতিদিন দেশজুড়ে মাতৃমৃত্যু, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু, আত্মহত্যার চেয়ে অনেক বেশি মৃত্যু ঘটছে যক্ষ্মায়। আরও যেটি আশঙ্কার তা হলো ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীও বাড়ছে দেশে। অনিয়মিত ওষুধ সেবন, চিকিৎসার পূর্ণ মেয়াদে ওষুধ সেবন না করলে যক্ষ্মা জীবাণু ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে প্রতি বছর ৫ হাজার মানুষ ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং যক্ষ্মার জীবাণু ছড়াচ্ছেন সমাজে।
বিশ্বের ৩০টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ যক্ষ্মা আক্রান্তের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। সরকারি কাগজপত্র বলছে, বর্তমানে যে ১০টি দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বেশি বাংলাদেশ তারও অন্যতম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের নজরদারির অভাব, এনজিওগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা ও লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চাপে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে তুলেছে। অনেক বছর ধরে বিদেশি অর্থায়নে দেশীয় এনজিওগুলো যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। তবু দেখা যাচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ওপর সরকার তথা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কম। যে কোনো স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে ওষুধ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অন্তত ৬ মাসের ওষুধ মজুদ রাখতে হয়। বাস্তবে সময়মতো উদ্যোগ না নেওয়ায় বর্তমানে দেখা দিয়েছে ওষুধের স্বল্পতাও। এমতাবস্থায় যক্ষ্মার ওষুধ ও কীট কেনার জন্য দাতাদেশের কাছে অর্থ চেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে যক্ষ্মা আক্রান্তদের সংখ্যা ৭০ হাজার এবং মৃত্যুর সংখ্যা ৬ হাজারে নামিয়ে আনার কথা রয়েছে। সরকারের উদাসীনতা, এনজিওগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি সর্বোপরি আক্রান্ত রোগীর নিয়মিত ওষুধ সেবনে অবহেলার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে নেই বাংলাদেশ।
প্যানেল/মো.
