বাংলাদেশে যে কোনো রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে রাজধানীতে নাশকতার ঘটনা নতুন নয়। জুলাই-আগস্টের বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশে, শেখ হাসিনার পালানোর পর তিনি ও তার দোসরদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় জোরেশোরে। চলমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাদের রায়ের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে কুচক্রী মহল। গত সোমবার রাজধানী ঢাকায় স্বল্পসময়ের মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক ককটেল বিস্ফোরণ, গণপরিবহনে আগুন লাগানো এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো নিছক বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়; বরং সমন্বিত ও সুপরিকল্পিত নাশকতার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করছে। ভোর পৌনে ৪টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর, খিলগাঁও ফ্লাইওভার, মৌচাক, মেরুল বাড্ডা ও শাহজাদপুর এলাকায় ধারাবাহিক ককটেল বিস্ফোরণের পাশাপাশি আগুন দেওয়া হয় গণপরিবহনে। সব ঘটনায়ই মোটরসাইকেলে হেলমেট পরিহিত দুর্বৃত্তরা দ্রুত হামলা চালিয়ে নিরাপদে পালিয়ে যায়।
একাধিক ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে একইসঙ্গে হামলা চালানো হয়েছে, যা হামলাকারীদের সংঘবদ্ধ প্রস্তুতি, রসদ, তথ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট বার্তা দেয়। বিশেষ করে হামলাগুলোতে মোটরসাইকেলে হেলমেট পরিহিত ব্যক্তিদের দ্রুত এসে আবার দ্রুত চলে যাওয়া ইঙ্গিত করে যে, তারা পরিকল্পনা নিয়েই হামলা করেছে। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, কাকরাইলের সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রাল ও সেন্ট জোসেফ স্কুল প্রাঙ্গণে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় যে যুবক গ্রেপ্তার হয়েছে, তার সঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রসংগঠনের সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।
অন্যদিকে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে দিবালোকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা সাম্প্রতিক নাশকতার চিত্রকে আরও জটিল করে তুলেছে। এটি শুধু এক ব্যক্তিকে হত্যা নয়, বরং রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করার শামিল। দীর্ঘদিন ধরে অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পারস্পরিক সংঘাতের মধ্যেই এই হত্যা সংঘটিত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আমরা মনে করি, এই হত্যাকাণ্ডের সময় স্থান ও পদ্ধতি নাগরিকদের নিরাপত্তাবোধকে আরও ভঙ্গুর করে তুলেছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ অপরিহার্য। নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা- গণতান্ত্রিক রাজনীতির ন্যূনতম শর্ত। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরও উচিত হবে শুধু তাৎক্ষণিক অভিযান নয়, বরং ঘটনাগুলোর নেপথ্যের স্বার্থগোষ্ঠীকে শনাক্ত এবং তাদের অর্থ, অস্ত্র ও লজিস্টিক নেটওয়ার্কের উৎস চিহ্নিত করে কুচক্রীদের নির্মূল করা। এ মুহূর্তে প্রয়োজন সর্বোচ্চ সতর্কতা, দ্রুত তদন্ত এবং নাশকতার মূল পরিকল্পনাকারীদের বিচারের আওতায় আনার সুদৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা। দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সবাইকে হতে হবে ঐক্যবব্ধ ও দায়িত্বশীল।
প্যানেল/মো.
